07 April 1971

ফিরে দেখা ইতিহাস
ঘাতক রাজাকার, আলবাদর জামাতী-খারেজীদের দিনলিপি
৭ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী

রাজাকার ইনফো: পূর্ব-পাকিস্তান জামাতের আমীর অধ্যাপক গো’ আযম, প্রচার সম্পাদক নুরুজ্জামান এবং ঢাকা জামাতের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম সরোয়ার এক যুক্ত বিবৃতিতে জানায়, পূর্ব-পাকিস্তানিরা কখনই পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও অখ-তার উপর আঘাত আসতে দেবে না। তারা ভারতকে পাকিস্তানের চিরশত্রু হিসেবে উল্লেখ করে বলে যে, ভারত অযথা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে। ধর্মব্যবসায়ী জামাতের নেতারা ভারতীয় ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে বলে যে, আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি, দেশপ্রেমিক পূর্ব-পাকিস্তানিরা অনুপ্রবেশকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) খতম করে দেবে। পূর্ব-পাকিস্তানিরা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদকে সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা করতে দেবে না।
পাকিস্তান জামাতের প্রধান মাওলানা মওদুদী পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানদের বাংলাদেশ আন্দোলন সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে যে, কতিপয় দেশদ্রোহী পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। যদি বিচ্ছিন্নতাবীদীরা (মুক্তিযোদ্ধারা) সফল হয় তবে তারা গোলামে পরিণত হবে।
এদিন জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন নেতা আব্দুস সবুর খান ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সে তার দলের পক্ষ থেকে জেনারেলকে নিশ্চয়তা দেয় সেনা বাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা করার। টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার কনসাল জেনারেল।
প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক এএনএম ইউসুফ জানায়, পূর্ব-পাকিস্তানে বাংলাদেশ বলে কোন সরকারের অস্তিত্ব নেই। অথচ ভারত এ ব্যাপারে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা চালিয়ে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সে দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করে যে, বহু কষ্টে আমরা পাকিস্তান লাভ করেছি। জীবন দিয়ে হলেও আমরা তাকে রক্ষা করবো।
এদিন ঢাকা শহর মুসলিম ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কেজি করিম দুষ্কৃতিকারী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের (তথা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে) বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সেনা বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানায়।
 সংগ্রামে ভারতীয় ভূমিকা সমালোচনা করে বিবৃতি দেয় পূর্ব-পাকিস্তান জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের সভাপতি তথাকথিত পীর মোহসেন উদ্দিন আহমদ।
আঞ্জুমান-ই মোহাজেরিন মাশরেকী পাকিস্তানের সভাপতি দেওয়ান ওয়ারাসাত হোসাইন খান জানায়, আল্লাহ তা’য়ালা আর একবার পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে। সে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলে যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সংহতির নিশ্চয়তা বিধানের চেয়ে মোহাজেররা আর কিছু বড় মনে করে না। মোহাজেররা পাকিস্তান রক্ষায় যেকোন ত্যাগ করবে।
জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগাশাহী সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
পাকিস্তানকে সহায়তা করার প্রতিবাদে ভারতের চীনা দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রতিবাদ জানায় চীন। প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের। প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থনদানের আবেদন জানায় রাওয়ালপিন্ডি বার সমিতির ৮০ জন আইনজীবী। তারা বলে যে, দুশমনদের উস্কানি এবং ঘৃণ্য চক্রান্তের ফলে পূর্ব-পাকিস্তানে উদ্ভূত সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা নামধারী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমালোচনা করে লিবীয় দৈনিক ‘আলহরিয়ার’সহ অন্যান্য পত্রিকা। এদিকে দিন দিন পাক বাহিনী ও এদেশীয় ঘাতক হানাদারদের পরিকল্পিত হামলার মাত্রা বাড়ছিল। সিলেট, রাজশাহী, রংপুর এবং আশপাশের এলাকায় তারা হামলা চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয় অনেক জনপদ।
(তথ্যসূত্র: দৈনিক পাকিস্তান, পূর্বদেশ, ধর্মব্যবসায়ী ঘাতক জামাতীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম ৯, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী।)