Razakar Nizami

৭১-এর ঘৃণিত খুনি মইত্যা রাজাকার নিজামী
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা, বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে অভিযুক্ত যে কজন ৯ম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল জামাতের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকার তাদের মধ্যে অন্যতমসে পাবনা-১ (বেড়া-সাঁথিয়া) আসনে জামাত তথা চারদলীয় জোট প্রার্থী হয়েছিল; কিন্তু পাবনাবাসী ঘৃণাভরে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেঅর্থাৎ সে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে
তার বিরুদ্ধে ¯^vaxbZv যুদ্ধের সময় হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা, রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দান এবং ধর্ষণ-নির্যাতনসহ নানা অপকর্ম চালানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছেপাবনার সাঁথিয়া উপজেলার মন্থপুর গ্রামের মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকার জোট সরকারের আমলে প্রথমে কৃষিমন্ত্রীর পরে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে
এএসএম সামছুল আরেফিন তার মুক্তিযুদ্ধের প্রেড়্গাপটে ব্যক্তির অবস্থান বইয়ে লিখেছেন, নিজামী মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব-পাকিস্তান আলবাদর বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলো (পৃ-৪২৭)একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্ট’-এ (সংক্ষিপ্ত ভাষ্য) বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে এই জামাত নেতা বাংলাদেশের ¯^vaxbZv যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার যাবতীয় কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেমুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জামাতের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেনতার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিহত এং মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য আলবাদর বাহিনী গঠন করা হয়মতিউর রহমান নিজামী এই আলবাদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ... আলবদরের নেতারা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করেন এবং তাদের নির্দেশে wW‡m¤^i মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়
নিজামী যে ¯^vaxbZvwe‡ivax ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বহু দলীল থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়যেমন ১৯৭১ সালের ১৪ b‡f¤^i দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিজামী বলেছিল, আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে, পাকবাহিনীর সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবাদর বাহিনী গঠন করেছেসেদিন আর খুব দূরে নয়, যেদিন আলবাদরের তরুণ যুবকরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে হিন্দু বাহিনীকে (মুক্তিবাহিনী) পর্যুদস্ত করে হিন্দুস্থানের অস্তিত্বকে খতম করে সারা বিশ্বে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করবে (সূত্র: গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট)
জাতীয় গণতদন্ত কমিশন রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান সংবলিত নিজামীর ভাষণ ও বিবৃতির বহু বিবরণ একাত্তরের জামাতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রামে ছাপা হয়েছেযশোর রাজাকার সদর দফতরে সমবেত রাজাকারদের উদ্দেশ্য করে নিজামী বলেছিল, জাতির এ সঙ্কটজনক মুহূর্তে প্রত্যেক রাজাকারের উচিত ঈমানদারির সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত এ জাতীয় কর্তব্য পালন করা এবং ওইসব ব্যক্তিকে খতম করতে হবে যারা সশস্ত্র অবস্থায় পাকিস্তান ও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে (পৃ:৫-৬)
নিজামীর এলাকার লোকজনও নিজামীর বিরুদ্ধে ¯^vaxbZv যুদ্ধের সময় হত্যা, লুটতরাজ ও নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেনযেমন ১৯৭১-এ ৭ b¤^i সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, তিনি আলবাদর বাহিনীর একটি সমাবেশ ও গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেনবৈঠকে মতিউর রহমান নিজামীও উপস্থিত ছিলোবৈঠকে কোথায় কোথায় মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি আছে তা চিহ্নিত করা হয়বৈঠকে নিজামী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, ঘাঁটি ধ্বংস এবং আওয়ামী লীগারদের শেষ করার নির্দেশ দেয়বৈঠকের পরদিন রাজাকার বাহিনীর সহযোগিতায় বৃশালিকা গ্রাম ঘিরে ফেলে গোলাগুলি, নির্যাতন ও লুটতরাজ করে এবং বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় আলবাদররানিজামীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে সাঁথিয়ার মিয়াপুর গ্রামের শাহজাহান আলী গণকমিশনকে জানান, যুদ্ধের সময় তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়লে আরো কয়েকজন আটক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তার গলায়ও ছুরি চালানো হয়েছিলঅন্যদের জবাই করা হলেও শাহজাহান আলী ঘটনাচক্রে বেঁচে যানগলায় কাটা দাগ নিয়ে তিনি এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন (জাতীয় গণতদন্ত কমিশন রিপোর্ট, সংক্ষিপ্ত ভাষ্য পৃ:-৬)
সাঁথিয়ার শোলাবাড়িয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ b‡f¤^i নিজামীর নির্দেশে এবং রাজাকার সাত্তারের নেতৃত্বে আলবাদর ক্যাডাররা ধুলাউড়ি গ্রামে গণহত্যা চালায় এবং ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেবেড়া উপজেলার বৃশালিকা গ্রামের সোহরাব আলীকে মাওলানা নিজামীর নির্দেশে গুলি করে হত্যা করে রাজাকার বাহিনীএছাড়া একই এলাকার প্রকল্প প্রামাণিক এবং তার ছেলে ষষ্টি প্রামাণিককে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করে এবং তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় ওই ঘটনার কয়েকজন সাক্ষী রয়েছেন বলে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কুদ্দুস জানান
সাঁথিয়ার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজামীর নির্দেশে করমজা গ্রামে গণহত্যা চালায় জামাত নেতা সিরাজ ডাক্তারের ছেলে রফিকুন্নবীএ ব্যাপারে ডা. সিরাজ ও রফিকুন্নবীকে আসামি করে ১৯৭২ সালে একটি মামলা হলেও পরে তা ধামাচাপা পড়ে যায়
সাঁথিয়ার মিয়াপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বলেন, নিজামীর প্রত্যক্ষ মদদে মুক্তিযোদ্ধা e‡Uk^i, চাঁদ, দারা, শাহজাহান, মোসলেম ও আখতারকে আলবাদররা হত্যা করেতারা মুক্তিযোদ্ধা কবিরের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সাঁথিয়ার লোকজন জানান, ¯^vaxbZv যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করায় এলাকার লোকজন মতিউর রহমান নিজামীকে মইত্যা রাজাকার বলেও ডাকেন
বুদ্ধিজীবী হত্যার পর ১৯৭১ সালের ৪ wW‡m¤^i মাওলানা নিজামী, মাওলানা সুবহান ও মাওলানা ইসহাকসহ পাকিস্তান হয়ে সউদী আরব পালিয়ে যায়সেখান থেকে তারা বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালাতে থাকে১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর মাওলানা নিজামী পাকিস্তান হয়ে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ যোগে ঢাকায় আসে এবং মগবাজারে একটি ভাড়া বাসায় উঠে
সাঁথিয়ার ক্ষেতুপাড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিন জামাতের সমর্থকতিনি বলেন, জামাতের লুটপাট আর ¯^RbcÖxwZi কারণে এখন জামাতের সমর্থক বলে পরিচয় দিতে লজ্জা করে
নিজামী বিএনপি-জামাত জোট সরকারের মন্ত্রী ছিলসে মন্ত্রী থাকাকালে সাঁথিয়ার জামাত নেতা-কর্মীরা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপর নানা নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছেসাঁথিয়া উপজেলা জামাতের সাবেক আমীর আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা আবদুল মালেক, প্রফেসর মোহাম্মদ আলী, আকমল হোসেন, বেড়া উপজেলা জামাতের আমীর আবু দাউদ, মকসুদ আহমেদ চৌধুরী ও জামাত নেতা রফিকুন্নবী এলাকায় নিজামীর প্রতিনিধিত্ব করেতাদের সম্পর্কে কোনো অভিযোগই নিজামী কানে তোলেনিতারা স্থানীয়ভাবে নিজামীর ৬ খলিফা হিসেবে পরিচত
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাঁথিয়া ও বেড়ায় সরকারি জায়গা দখল করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে নিজামীর সহযোগীরাআলহেরা একাডেমী, ছোন্দহ কলেজ, জোড়গাছা কলেজ এসবের মধ্যে অন্যতম
সাম্প্রতিক জরুরী অবস্থাকালে নিজামীর বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতির মামলা করা হয়মামলা দুটি হলো বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাগ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় সে বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেওই মামলায় সে জামিনে রয়েছে
সদ্য সমাপ্ত ৯ম সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে নিজামী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল হলফনামায় বলেছে, তার নিরুদ্ধে ফৌজদারি তিনটি মামলা রয়েছেএকটি মামলার কার্যক্রম ২০/০৫/০৭ তারিখে স্থগিত হয়েছেঅপর একটি মামলার কার্যক্রম ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২ ও ৫ ধারা এবং জরুরী বিধিমালা আইনের-০৭নং-এর ১৫ বিধিমোতাবেক স্থগিত রয়েছেএছাড়া অন্য মামলাটির কার্যক্রমও দুই মাসের জন্য স্থগিত রয়েছে, যা হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি মিস কেস নং-১৯৩২৭/০৮ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই নিজামী দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয় এবং কিছুদিন কারাভোগ করে