রাজাকার প্রিন্সিপাল রুহুল কুদ্দুসের হাক্বীকত
কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছিল কথিত প্রিন্সিপাল শাহ রুহুল কুদ্দুস। একাত্তরের ¯^vaxbZv যুদ্ধে সে ছিলো কেন্দ্রীয় শান্তিকমিটির তেইশ b¤^i সদস্য। রাজাকার বাহিনীর কেন্দ্রীয় সংগঠকও ছিলো সে। জমায়েতে মওদুদীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও সংসদীয় দলের সদস্যসচিব রুহুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের নানা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে কুখ্যাত রাজাকার হিসেবেই পরিচিত ছিলো সে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকাশিত৭১ : গণহত্যার দলিল ও মুক্তিযুদ্ধে ব্যক্তির অবস্থান গ্রন্থে এবং ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির কাছে সংরক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দলীল-দস্তাবেজ থেকে জানা গেছে, শাহ রুহুল কুদ্দুস মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিচিত ছিলো প্রিন্সিপাল রুহুল কুদ্দুস নামে। তার বাবা কয়রা উপজেলার আমাদী গ্রামের মরহুম শাহ মকবুল হোসেন। রাজশাহী wek^we`¨vj‡q পড়ার সময় ১৯৬৩ সালে রুহুল কুদ্দুস ছিলো নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক। লেখাপড়া শেষে বাগেরহাটের রামপালের একটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে চাকরি শুরু করে। ১৯৭১ সালে বাগেরহাটের একটি কলেজে সে শিক্ষকতা করতো। ওই কলেজে শিক্ষকতার সময় রাজাকার বাহিনীর নেতা হিসেবে বাগেরহাটে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকান্ডে অংশ নেয়। দেশ ¯^vaxb হওয়ার পর সে আর নিজ এলাকায় ফিরে না এসে আত্মগোপনে চলে যায়। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পটপরিবর্তনের পথ ধরে এলাকায় ফিরে আসে সে। যুক্ত হয় জমায়েতে মওদুদীর রাজনীতির সঙ্গে। সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে অল্পদিনেই জমায়েতে মওদুদীর শীর্ষস্থানীয় নেতা বনে যায় সে।
মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ b¤^i সেক্টরের আঞ্চলিক কমান্ডার ও খুলনার মুক্তিযোদ্ধা অডভোকেট স ম বাবর আলী বলেছেন, ‘ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ইংরেজিতে একটি বই প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ রয়েছে, একাত্তরে সে আলবাদর বাহিনীর নেতা ছিলো। পাক বাহিনীর দোসর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের উপর বিভিন্ন অত্যাচার চালায় সে।
১৯৯১ সালে জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হয় শাহ রুহুল কুদ্দুস। সে ঐ বছর ধর্মব্যবসায়ী জমায়েতে মওদুদীর দল থেকে মনোনয়ন নিয়ে খুলনা-৬ আসনের সাংসদ নির্বাচিত হয়। কিন্তু টানা পাঁচ বছর এলাকার উন্নয়নে কোনো কাজ না করায় তীব্র ইমেজ সঙ্কট দেখা দেয় তার। পরাজিত হয় ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে w™^Zxq দফায় সাংসদ নির্বাচিত হয়। সেই থেকে বদলে যেতে থাকে তার পরিবারের অবস্থা। বাবার ড়্গমতার দাপটে ছেলে শাহ জুবায়ের হোসেন নিয়ন্ত্রণকর্তা বনে যায় সুন্দরবনের পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা অংশের। মাত্র পাঁচ বছরে মালিক হয় কোটি কোটি টাকার। বর্তমানে কয়রা ও পাইকগাছার জমায়েতে মওদুদীর দুটি সিন্ডিকেটের mgš^qK রুহুল কুদ্দুসের বড় ছেলে শাহ জুবায়ের।
ধর্মের কথা বলে রাজনীতি করলেও কেবলমাত্র তার আদরের পুত্র শাহ জুবায়ের মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। তার পরিবারের আর কেউই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। ধর্মের ন্যূনতম অনুশাসন মেনে চলে না তারা কেউই। দুই বছর আগে খুলনায় এক প্রতিবেশী মহিলাকে মাথা ন্যাড়া করে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে অসহনীয় নির্যাতনের সেই চিত্র এখনো ভীতির সঞ্চার করে এলাকাবাসীর মধ্যে। তখন এ ঘটনা জাতীয় পর্যায়েও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তোলে।
এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বাবা সাংসদ হওয়ার পর থেকে সুন্দরবনের কাঠ ও গোলপাতা চুরির একাধিক সিন্ডিকেট গড়ে তোলে জুবায়ের। আয় করতে থাকে বিপুল অর্থ। কয়রায় ৬-৭টি ঘের দখল করে ব্যবসা করছে। বিগত জোট সরকারের আমলের পাঁচ বছরে জমায়েতে মওদুদীর প্রভাব খাটিয়ে দুটি উপজেলার সরকারি বরাদ্দ থেকে আদায় করেছে মোটা অঙ্কের কমিশন।
এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেও পৈতৃক বাড়িতে নামমাত্র একটি টিনের ঘর তুলেছে রুহুল কুদ্দুস। সে থাকে খুলনায় অভিজাত এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, রুহুল কুদ্দুস ঢাকায় একটি বাড়ি কিনেছে। আর পুত্র শাহ জুবায়ের পাইকগাছা উপজেলার জমায়েতে মওদুদীর নেতা গাজী তানজিদ আলম, মাওলানা আবুল কাশেম, মাওলানা আবদুল মজিদ ও চাচার মেয়ে জামাই মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে এ উপজেলার টেন্ডারবাজি, পুলিশের দালালিসহ সব প্রশাসনিক কর্মকা-। আর কয়রা উপজেলায় এসব বিষয় দেখভাল করত সাংসদ বাবার মদদপুষ্ট জামাত নেতা সোহরাব হোসেন, ওলিউল্লাহ, ডা. জিন্নাহ ও মাওলানা শামসুজ্জামান।
২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর কয়রায় রুহুল কুদ্দুসের অনুসারী কয়েকজন জমায়েতে মওদুদীর নেতা দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আদালত বসিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় এ ব্যাপারে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে জমায়েতে মওদুদীর নেতা-কর্মীরা আদালতটি বন্ধ করে দেয়।
পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি জিএ সবুর ধর্মের অনুশাসন না মানার অভিযোগ তুলে বলেছেন, পারিবারিকভাবেই যে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী নয়, সে কী করে দেশে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবে? তিনি আরো বলেছেন, এই জমায়েত নেতা নিজের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতেই সাংসদ হয়েছে।’ এমনকি রুহুল কুদ্দুসের AvZ¥xq¯^RbivI ড়্গিপ্ত এ পরিবারের উপর। রুহুল কুদ্দুসের আপন চাচাত ভাই কয়রার আমাদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ ইবাদত আলী বলেছেন, জনগণের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতাসীন হয়ে যারা তাদের সম্পদ লুটে খায় তারা অবশ্যই আল্লাহ পাক-এর বিরোধী। শাহ রুহুল কুদ্দুস তাদেরই একজন। আর সাবেক সাংসদ জেলা অওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক বলেছেন, আল্লাহর আইন আর সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার নামে জনগণের ভোট নিয়ে শাহ রুহুল কুদ্দুস নিজেকে সমাজে একজন ধনী ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আর এসব অপতৎপরতা তুলে ধরে দৈনিক আল ইহসানে প্রায় সপ্তাহব্যাপী খুরাধার লেখনী পত্রস্থ হয়। দৈনিক আল ইহসান পৌঁছে যায় খুলনার মানুষের ঘরে ঘরে। সর্বস্তরের মানুষ জেনে যায় ৭১-এর কুখ্যাত ঘাতক কথিত প্রিন্সিপাল শাহ রুহুল কুদ্দুসের হাক্বীক্বত। ফলে খুলনা-৬ আসনের মানুষরা এ নরঘাতককে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে। শোচনীয় পরাজয় হয় তার। (সঙ্কলিত)