কুখ্যাত নরঘাতক আলী আহসান মুজাহিদ
জমায়েতে মওদুদীর সেক্রেটারি জেনারেল কুখ্যাত নরঘাতক আলী আহসান মুজাহিদ ২৯ wW‡m¤^i ২০০৮ ঈসায়ী অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে cÖwZ™^w›ØZv করে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট জনরা জমায়েতে মওদুদীর সেক্রেটারি জেনারেল ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। দৈনিক আল ইহসান শরীফেও তার মতো কুখ্যাত রাজাকারের হাক্বীকত উন্মোচন করে প্রায় সপ্তাহব্যাপী বিশেষভাবে লেখালেখি পত্রস্থ হয়। যা পৌঁছে যায় ফরিদপুরবাসীর কাছে। জেগে উঠে ফরিদপুরবাসী। ফরিদপুরবাসী সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় সংসদে পাঠাবে না কুখ্যাত ঘাতক মইজ্যা রাজাকারকে। ফলে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে তাকে। শোচনীয় পরাজয় হয় তার।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘাতক মুজাহিদের ¯^vaxbZvwe‡ivax অপতৎপরতার কথা বহু দলীলে উল্লেখ রয়েছে। সাবেক সাংসদ ও ফরিদপুর জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আহ্বায়ক প্রিন্সিপাল দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, আলী আহসান মুজাহিদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে পত্রপত্রিকায় পড়েছি, রেডিওতে শুনেছি ও জেনেছি মুজাহিদ পাকবাহিনীর দোসর আলবাদর বাহিনীর কমান্ডার ছিল।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ফরিদপুর জেলা ইউনিটের কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহ্নেওয়াজ বলেন, ‘মুজাহিদ ছিল আলবাদর বাহিনীর ডেপুটি চিফ। এ আলবাদর বাহিনীর নীলনকশা অনুযায়ী দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ফরিদপুর জেলা কমিটির সদস্য সচিব শাহ্নেওয়াজ আরো বলেন, ‘আমাদের সংগঠন প্রামাণ্য দলীল ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মুজাহিদসহ ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর নামের তালিকা প্রকাশ করেছে।’
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ফরিদপুর জেলা mgš^qKvix মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফরিদ বলেছেন, ‘আলবাদর বাহিনীর কমান্ডার মুজাহিদ ঘৃণিত ব্যক্তি। এরা বাংলাদেশের ¯^vaxbZv ও সার্বভৌমত্বের শত্রু এবং দেশকে পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ যাবৎ বাংলাদেশে যত অনাসৃষ্টি হয়েছে তার মূল হোতা এরাই।’
ফরিদপুরের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীন বলেছেন, ‘চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ দিয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করেনি। মুজাহিদসহ সব যুদ্ধাপরাধীর অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সম্পর্কে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আলী আহসান মুজাহিদ ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দলীয় আদর্শ অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনে সহযোগিতা করেছে। তার নেতৃত্বাধীন আলবাদর বাহিনী বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে এ দেশের বুদ্ধিজীবীদের। আলী আহসান মুজাহিদের ¯^vaxbZvwe‡ivax অপতৎপরতার বিবরণ পাওয়া গেছে সে সময়ের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে।’ ১৯৭১ সালের ১৫ †m‡Þ¤^i ফরিদপুরে ছাত্রসংঘের এক জমায়েতে ‘বিপুল করতালির মধ্যে’ আলী আহসান মুজাহিদ ঘোষণা করে, ‘ঘৃণ্য শত্রু ভারত দখল করার প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদেরকে আসাম দখল করতে হবে। এজন্য আপনারা সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আলী আহসান মুজাহিদ ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে থাকত, তার মধ্যে একটি বাড়ি হলো: শেখ ভিলা, ৩/৫ নয়াপল্টন। তবে আলী আহসান মুজাহিদের প্রধান আড্ডা ছিল ফকিরাপুল গরম পানির গলিতে ফিরোজ মিয়ার ১৮১ b¤^i (বর্তমান ২৫৮ b¤^i) বাড়িটিতে। ’৭১-এ মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকার মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার বর্তমানে জাতীয় পার্টি নেতা আবদুস সালাম, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক জিএম গাউস, মুক্তিযোদ্ধা ও কলামিস্ট মাহবুব কামালের সাড়্গ্য অনুযায়ী জানা গেছে, ফিরোজ মিয়া ছিল এ এলাকার রাজাকার কমান্ডার। তার বাড়িটি শুধু ফকিরাপুল এলাকার নয়, পুরো ঢাকা শহরের রাজাকারদের অন্যতম ঘাঁটি ছিল। এখানেই অনুষ্ঠিত হতো রাজাকারদের বিভিন্ন সভা, সশস্ত্র ট্রেনিং ইত্যাদি। এখান থেকেই পরিচালিত হতো রাজাকারদের বিভিন্ন অপারেশন, রাজাকার রিক্রুটমেন্ট। এখানে এলাকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির লোকদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো।
ফিরোজ মিয়া গংয়ের নীতিনির্ধারক ছিল আলী আহসান মুজাহিদ। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে তার নির্দেশেই পরিচালিত হতো ফকিরাপুল এলাকার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যাবতীয় তৎপরতা।
জিএম গাউস বলেছেন, ’৭০-এর মাঝামাঝি সময় থেকেই আমরা ফকিরাপুল এলাকার ভাড়াটিয়া আলী আহসান মুজাহিদকে চিনতাম জামাত ও কথিত ইসলামী ছাত্রসংঘের লোক হিসেবে। সে এলাকায় দলের সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতো। কেন্দ্রীয় সমাবেশে এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যেতো। এলাকার ছেলেদের ছাত্রসংঘে যোগদানের ব্যাপারে প্ররোচিত করতো। ’৭১-এর মার্চের পর মুজাহিদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ফকিরাপুলে রাজাকার বাহিনী সংগঠিত হয়। যার নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ফিরোজ মিয়াকে (ফেরু †g¤^vi)| মুজাহিদের সরাসরি নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে ফকিরাপুল এলাকায় রাজাকার বাহিনীর তৎপরতা, অস্ত্র ট্রেনিং, রিক্রুটমেন্ট ইত্যাদি। সে এলাকার রাজাকারদের অস্ত্র-অর্থ সংগ্রহসহ যাবতীয় দুষ্কর্মে সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি পর্যায়ে অত্র এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং ¯^vaxbZvi পক্ষের বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে অত্যাচার-নির্যাতন, এমনকি হত্যা করার উদ্দেশ্যে গঠিত আলবাদর বাহিনীর নেতা ছিল আলী আহসান মুজাহিদ। জাতীয় পার্টি নেতা আবদুস সালাম বলেন, ‘১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ফকিরাপুল গরম পানির গলির ফিরোজ মিয়ার বাড়িটি ছিল রাজাকারদের অন্যতম নির্যাতন কেন্দ্র। ফিরোজ মিয়া গংয়ের নীতিনির্ধারক বা পরামর্শদাতা ছিল আলী আহসান মুজাহিদ। অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে মুজাহিদের অপতৎপরতা শুধু ফকিরাপুল এলাকায় নয়, বিস্তৃত ছিল পুরো ঢাকা শহরে।’
গণতদন্ত কমিশনের রিপোর্টে বলা আরো হয়েছে, ‘মুজাহিদের রিক্রুট ফিরোজ মিয়া ফকিরাপুল এলাকার ৩০০ সদস্যের একটি রাজাকার প্লাটুন গড়ে তোলে।’ ফকিরাপুল এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, ‘ফিরোজ মিয়া গং যুদ্ধের সময় ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার শত শত বাঙালিকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। নির্যাতন চালিয়েছে এলাকার মেয়েদের উপর।... ’
আলী আহসান মুজাহিদের ¯^vaxbZvwe‡ivax তৎপরতা ও নৃশংসতা একাত্তরেই শেষ হয়ে যায়নি। অথচ সেই ঘাতক মুজাহিদ আজ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে দেশের মানুষের ™^v‡i ™^v‡i হাজির হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
ঘা.দা.নি.ক. নেতা শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী’ এবং ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ শীর্ষক গ্রন্থে দীপু হোসেন তার নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী মুজাহিদ ১৯৭১ সালের অক্টোবরে মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংগঠনিক সফর করে। ২৫ অক্টোবর ইসলামী একাডেমী হলে প্রাদেশিক সদস্যদের এক সম্মেলনে মুজাহিদ তার বক্তব্যে পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতিকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় (সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম ২৬-১০-৭১)। একই মাসের ২৭ তারিখে রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুজাহিদ সবাইকে জিহাদি মনোভাব নিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানায় (সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম ২৮-১০-৭১)।
মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন আলবাদর বাহিনী ১৯৭১ সালের শেষভাগে তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেয় এবং ১৪ b‡f¤^i আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় ‘বদর দিবস’ পালন করে।”
আলী আহসান মুজাহিদের বাবা মওলানা আবদুল আলী ছিল স্কুল শিক্ষক ও হেকিম। মুজাহিদের ভাই খালেছ ফরিদপুর জেলা জমায়েতে মওদুদীর নায়েবে আমীর। তার এক ভাই আসলাম ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, তার আরেক ভাই আলী আশরাফ সোয়ায়েব দৈনিক সংগ্রামের ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি। মুজাহিদের বড় ছেলে তাসদিদ রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করে। মেজ ছেলে তাহ্ফিক গ্রামীণফোনের একজন কর্মকর্তা এবং ছোট ছেলে মাবরুর রাজধানীতে অনুবাদকের কাজ করে। তার একমাত্র মেয়ে তামরিনা ঢাকা ইডেন কলেজে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী।
মুজাহিদ অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় কথিত ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসংঘে’ যোগদান করে রাজনৈতিক জীবন শুরু করে। ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে সে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়। কলেজ জীবনে সে জমায়েতে মওদুদীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এরপর সে ঢাকায় চলে যায়।
¯^vaxbZv যুদ্ধের পর মুজাহিদ নারায়ণগঞ্জে আদর্শ কিন্ডারগার্টেন নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিন বছর প্রধান শিক্ষক পদে ছিলো। রাজনীতিতে জড়িত থাকা অবস্থাতেই মুজাহিদ চট্টগ্রাম wek^we`¨vjq থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ করেছে। (সঙ্কলিত)