Razakar Abdul Khalek (Satkhira)


রাজাকার আবদুল খালেক মন্ডলের হাক্বীক্বত

৯ম সংসদ নির্বাচনে জমায়েতে মওদুদী নেতা আবদুল খালেক মন্ডল সাতক্ষীরা-২ আসন (সদর) থেকে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পায়একাত্তরে ¯^vaxbZv যুদ্ধের সময় খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ অগণিত অভিযোগ রয়েছে আবদুল খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে১৯৭১ সালের ৭ wW‡m¤^i সাতক্ষীরা মুক্ত হওয়ার দিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাকে আটক করেসে সূত্রে আবদুল খালেক মন্ডল ছিল সাতক্ষীরা কারাগারের প্রথম যুদ্ধাপরাধী বন্দিসাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ একাত্তরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাবেক জমায়েত এমপি আবদুল খালেক মন্ডলের জীবনের কালো অধ্যায় সম্পর্কে জানান¯^vaxbZv যুদ্ধের ৯ মাসে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, পাক সেনাদের ক্যাম্পে নারী সাপ্লাই, বাড়ি দখল, অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যাসহ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পৈশাচিকভাবে নরহত্যার মতো অপরাধ করেছে ঘাতক আবদুল খালেক মন্ডলভীতসস্ত্রস্ত মানুষ তার উপাধি দিয়েছিল জল্লাদ খালেক
জল্লাদ খালেকের একাত্তরের আমলনামা:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা খলিলনগর গ্রামের লালচাঁদ মন্ডলের ছেলে আবদুল খালেক মন্ডল মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পরপরই রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়সে পাক সেনাদের বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেতারই নেতৃত্বে সীমান্তবর্তী কাথন্ডা গ্রামের আবুল হোসেন গাজীকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়তার সহযোগিতায় এলাকার অসংখ্য নিরপরাধ সাধারণ মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যকে পাক বাহিনীর বৈকারী ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়তাদের মধ্যে আছেন খলিলনগর গ্রামের মুনছুর আলী সরদার, কাথন্ডা গ্রামের হিমেপান্তি ও বলদঘাটা গ্রামের সামসুর রহমান প্রমুখএকই এলাকার অহেদকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে খালেক ম-ল বাড়ি থেকে পাক সেনাদের ক্যাম্পে ডেকে নেয় এবং তারই পরামর্শে পাক সেনারা অহেদকে গুলি করে হত্যা করেঘোনার বাঁশিয়াপাড়ার তাহের আলীর ছেলে ভারতে মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিংয়ে যাওয়ার কারণে খালেক মন্ডল ও এক পাক সেনা স্থানীয় দাঁতভাঙা বিল থেকে ধরে নিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে
কাথন্ডা গ্রামের শহর আলী দফাদার, মোহর আলী দফাদার, বদরুজ্জামান মল্লিক, আবদুর রাজ্জাক সরদার ও দেলোয়ার হোসেন সরদারসহ ৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে খালেক ম-লের নেতৃত্বে পাক আর্মির বৈকারী ক্যাম্পে ধরে এনে উল্টো করে ঝুলিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়সৌভাগ্যক্রমে তারা সবাই বেঁচে যান
একাত্তরের এপ্রিলে সাতড়্গীরা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের পাশে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিল জল্লাদ আবদুল খালেক মন্ডলএই হত্যাযজ্ঞে ভারতে আশ্রয় নেয়ার উদ্দেশ্যে সেখানে জড়ো হওয়া শত শত নারী-পুরুষ-শিশুকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয় বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবিশহরের ডায়মন্ড হোটেলের (তৎকালীন) টর্চার সেলে জল্লাদের ভূমিকা পালন করত সেতারই নেতৃত্বে সীমান্ত ঘেঁষা বৈকারী, সাতানী, কাথন্ডা ও ভাদড়ায় বহু বাঙ্কার খনন করা হয়ওইসব বাঙ্কারে ভারতগামী অসংখ্য শরণার্থীকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়া হয়এসব কথার বয়ান দেন সাতড়্গীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক এনামুল হক এবং ঘোনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ
¯^vaxbZv যুদ্ধকালে বৈকারী হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র জালালউদ্দিন জানান, খালেক মন্ডলের নির্দেশে বাঙ্কার খুঁড়তে A¯^xK…wZ জানানোয় খলিলনগর গ্রামের ঈমান আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়জালাল বলেন, যুদ্ধের সময় একদিন বৈকারী স্কুলে এসে আলবাদর কমান্ডার জল্লাদ আব্দুল খালেক ১৭ জন ছাত্রের তালিকা করে তাদের বাঙ্কার খোঁড়ার নির্দেশ দেয়হুকুম না মানায় রাজাকার বাহিনী তার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর চালায়শহরের পলাশপোল এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, সাবেক জময়েতে মওদুদী নেতা এমপি আবদুল খালেক ম মন্ডল একজন যুদ্ধাপরাধী
এদিকে  আবদুল খালেক মন্ডলের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক কর্মকান্ডের সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহ গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা পিজি হাসপাতালের চিকিৎসক সহিদুর রহমান জানান, ১৯৭১ সালের ৭ wW‡m¤^i সাতক্ষীরা মুক্ত হয়সেদিন আমি সাইকেলে চড়ে শহরে আসার পথে কদমতলা ব্রিজের কাছে এসে দেখতে পাই খালেক মন্ডলসহ ৩ জনকে পিঠমোড়া করে বেঁধে রাখা হয়েছে
এর পরের ঘটনা সম্পর্কে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ আরো বলেন, সেদিন অলৌকিকভাবে জনরোষ থেকে প্রাণে বেঁচে যায় আবদুল খালেক মন্ডল
সাতড়্গীরা কারাগারে প্রথম যুদ্ধাপরাধী বন্দি ছিল খালেক মন্ডলকয়েক মাস সেখানে কারাভোগের পর বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ড়্গমার সুযোগে সে মুক্তি পায়পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার একটি মাদ্‌রাসায় চাকরি নেয় আবদুল খালেক মন্ডল
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই খালেক মন্ডল শহরের ফুড অফিস মোড়ে অবস্থিত একটি বাড়ি দখল করে নেয়এরপর টানা ৮ মাস ওই বাড়িতে খালেক মন্ডল তার রাজাকার সঙ্গীদের নিয়ে বসবাস করেwW‡m¤^i সাতক্ষীরামুক্ত হওয়ার পর বাড়িটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলা ব্রিজের কাছে সে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে
এদিকে আঁগরদাড়ি মাদরাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেপরে ওই টাকা সে সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে বাধ্য হয়
এমপি হওয়ার পরের ভূমিকা:
বিগত বিএনপি-জমায়েত জোট সরকারের শাসনামলে সাতক্ষীরা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আবদুল খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে জঙ্গি মদদের অভিযোগ উঠে২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার পর শুরু হয় পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানজেএমবি জঙ্গি গোষ্ঠীকে প্রথম শনাক্ত করা হয় সাতক্ষীরা থেকেইকিন্তু সাবেক জমায়েত এমপি আবদুল খালেক মন্ডলের অবৈধ হস্তক্ষেপে বাধাগ্রস্ত হতে থাকে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানএর প্রমাণ হচ্ছে ওই সময় তার বিরুদ্ধে করা জিডিগুলোসাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোহাম্মদ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্রতিবন্ধকতার কারণে আবদুল খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে ৭টি জিডি করেনকিন্তু আবদুল খালেক মন্ডল থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরেইজোট শাসনামলে সরকারের ত্রাণের টিন খালেক মন্ডলের নির্দেশনা অনুযায়ী জমায়েতে মওদুদীর অনুগত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করার অভিযোগ উঠে
২০০৬ সালের ১৯ মার্চ দৈনিক খবরের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৯৭ সালের ১৭ মে খালেকের বাড়িতে বসে জেএমবির প্রথম মজলিসে শুরা গঠন করা হয়এরপর ১৯৯৮ সালে জেএমবির আত্মপ্রকাশ ঘটেপ্রথম মজলিসে শুরার বৈঠকে ২০১৫ সালের মধ্যে তালেবানি কায়দায় সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়(সঙ্কলিত)