ইব্রাহিম জল্লাদের খাজুরা ঘাঁটিতে কিলিং রুমে ছিল এক হাঁটু রক্ত
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যেদিন এদেশের ¯^vaxbZvKvgx মানুষ বিজয় অর্জন করে তার মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। মুক্তি আর মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণে পাকিস্তানি বাহিনীর তখন ত্রাহি অবস্থা। একাত্তরের ৭ wW‡m¤^i যশোর ক্যান্টমেন্ট ছেড়ে পালায় পাক বাহিনী। আর মিত্র বাহিনী যৌথভাবে অভিযান চালায় যশোরের খাজুরাস্থ এমএন মিত্র হাইস্কুলে। এখানে ছিল রাজাকারদের শক্তিশালী একটি ঘাঁটি। যার নেতৃত্বে ছিল রাজাকার কমান্ডার ডা. ইব্রাহিম। নৃশংসতার জন্যে যাকে লোকে আসলে জল্লাদ নামে চিনত। বিষয়টি জানতে পেরে মিত্র বাহিনীর ৭ অফিসারের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ঐ ক্যাম্প দখল করার জন্য অভিযান চালায়। মিত্রবাহিনীর জওয়ানরা রাজাকারদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। মহাধুরন্ধর জল্লাদ ইব্রাহিম কৌশল খাটিয়ে তার লোকজনদের জয়বাংলা ধ্বনি দিতে বলে। এ সময় মিত্রবাহিনীর ৬ জওয়ান সেখানে প্রবেশ করলে ইব্রাহিম বাহিনীর অস্ত্র গর্জে উঠে। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ৬ জওয়ান। এরপর মিত্রবাহিনীর ট্যাংক ত্রসে রাজাকারদের ঐ ঘাঁটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। তবে এর আগেই রাজাকার ইব্রাহিম তার সঙ্গী রাজাকারদের নিয়ে সেখান থেকে সটকে পড়ে। জল্লাদ ইব্রাহিমের নাম শুনলে এখনো মানুষ আঁতকে উঠেন।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু এই মিত্রবাহিনীর ৬ জওয়ান নয়, জল্লাদ ইব্রাহিম ডাক্তারের হাতে ঐ সময় শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান। দেশ ¯^vaxb হবার পর এমএন মিত্র হাইস্কুলের কমনরুমে জমাট বাঁধা এক হাটু রক্ত দেখতে পেয়েছিলেন এলাকার মানুষ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আর তরুণী মেয়েদের ধরে নিয়ে ইজ্জত-সম্ভ্রমহরণ শেষে সেখানে হত্যা করা হত। লাশ ফেলে দেয়া হত পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীতে।
মনোহরপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম জানান, যশোর-মাগুরা সড়ক ধরে কিছুটা দড়্গিণে এগুলেই খাজুরা বাজার। বাজারের পশ্চিম পাশেই এমএন মিত্র হাইস্কুল। এ স্কুলের গভার্নিং বডির সেক্রেটারি ছিল ডা. ইব্রাহিম। ¯^vaxbZv যুদ্ধ শুরু হলে ডা. ইব্রাহিম স্কুল বন্ধ ঘোষণা করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলে। যার নেতৃত্বে থাকে সে নিজেই। ক্যাম্পে গড়ে তোলে এমএন হাইস্কুলেই- নিজেকে সে খাজুরা রাজাকার কাম্পের ‘ওসি’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। তারপর শুরু করে বর্বরতা। যারা †`k-¯^vax‡bi জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে ইব্রাহিম ডাক্তার তাদেরকে আত্মসমর্পণ করে রাজাকার হতে নির্দেশ দেয়। না শুনলেই তাদের ধরে এনে হত্যা করা শুরু করে। যতো দূর জানা গেছে, তার বর্বরতার প্রথম শিকার হন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ডা. আব্দুল কাদের। ঐ সময় ২ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে জল্লাদ ইব্রাহিম খাজুরা টর্চার সেলে অকথ্যভাবে নির্যাতন শেষে হত্যা করে। তারপর সে ও তার হায়েনার দল হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা ২ ভাই ময়েন উদ্দিন ময়না ও আয়েন উদ্দিন আয়নাকে। তাদের বাড়িটিও জল্লাদ ইব্রাহিম বাহিনী পুড়িয়ে দেয় বলে জানান আবুল কাশেম।
এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে ২২ মুক্তিযোদ্ধা খাজুরা ক্যাম্প এলাকার কাঠুরাকান্দি গ্রাম দিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছিল। তাদের সেখানে গিয়ে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়ার কথা ছিল। তাদের যাওয়ার খবরটি পেয়ে যায় জল্লাদ ইব্রাহিমের লোকজন। সামনে রাজাকার বাহিনী রয়েছে বলে তারা ঐ ২২ মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে অস্ত্র হাতিয়ে নিয়ে তাদের একটি ঘরে আটকিয়ে রাখে। এরপর হায়েনা বাহিনী নিয়ে আসে জল্লাদ ইব্রাহিম। সে এসে ধরে নিয়ে যায় ২২ মুক্তিযোদ্ধাকে। তারপর আটকে রাখে খাজুরা টর্চার সেলে। সেখানে রেখে তাদের উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন। তারপর ২২ জনকেই হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় চিত্রা নদীতে। সে সব কথা মনে হলে এখনো অনেকের চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ে। কেউ কেউ শিউরে উঠেন।
তবে একটি ঘটনা এখনো ভুলতে পারেন না সে দিনের নীরব সাড়্গী ছিলেন যারা। তারা জানান, চ-ীপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আজিজকে জল্লাদ ইব্রাহিম গং ধরে আনে খাজুরা রাজাকার ক্যাম্পে। তাকে আটকে রেখে কয়েকদিন ধরে নির্যাতন চালায়। তারপরও আজিজ তাদের কথা না শোনায় তাকে টুকরা টুকরা করে কেটে হত্যা করে জল্লাদ ইব্রাহিম ও তার সহযোগী হায়েনারা। তারপর লাশ ভাসিয়ে দেয় চিত্রা নদীতে। এ সময় নরঘাতকরা আজিজের গুপ্তাঙ্গ কেটে তার মুখের মধ্যে পুরে দেয়। এলাকার মানুষ জানান, দেশ ¯^vaxb হলে জল্লাদ ডা. ইব্রাহিমের খাজুরা ক্যাম্পে গিয়ে তারা একটি কড়্গে (কিলিং রুম) জমাট বাঁধা এক হাঁটু রক্ত দেখতে পেয়েছিলেন। ঐ রক্ত ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এখনো যেন কান পাতলে শোনা যায় বাঁচার জন্য মানুষ কাকুতি মিনতি করছে। তার জবাবে ভেসে আসছে আগ্নেযাস্ত্রের বিকট শব্দ। ভেসে আসছে তরুণী কোনো মেয়ের সর্বস্ব লুটে নেয়ার পূর্ব মুহূর্তের আর্তনাদ। খাজুরার মানুষ এ সবকিছুর জন্য যাকে দায়ী করেন সে হলো ডা. ইব্রাহিম। তার বর্বরতার জন্য তাকে সবাই জল্লাদ হিসেবে চেনে।
এলাকা দখলমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ ইব্রাহিম পালিয়ে যায়। কিছুদিন পর খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ৫/৬ কিলোমিটার দূরের চাঁদপুর এলাকা থেকে তাকে ধরে আনে এবং গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।
জল্লাদ ইব্রাহিমের বাহিনীর হত্যা, সম্ভ্রমহরণ, নির্যাতন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অপকর্মের বর্ণনা দিলেন যশোরের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম। ¯^vaxbZvi পর স্থানীয় দৈনিক গ্রামের কাগজ ও দৈনিক রানার এবং জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠে বিভিন্ন সময়ে রাজাকার ইব্রাহিম ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের অপকর্মের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
(১১ wW‡m¤^i ২০০৭ ঈসায়ীর জাতীয় দৈনিক Aej¤^‡b|)