06 April 1971

ফিরে দেখা ইতিহাস
ঘাতক রাজাকার, আল-বাদর মওদুদী জামাতী, দেওবন্দী খারিজী, ওহাবী সালাফীদের দিনলিপি
৬ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া পুনর্বার ঘোষণা করেন পাকিস্তান তার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অন্যকোনো দেশের হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবে না। তিনি সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মি. পদগর্নীর ৩ এপ্রিল প্রদত্ত বাণীর জবাব দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের বর্তমান ঘটনায় ভারতের প্রকাশ্য ও নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের একমাত্র কারণ হচ্ছে কিছু সংখ্যক লোককে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে গোলযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে পরিসি'তিকে আরো উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলা। ভারতের এ ধরনের আচরণ সম্পূর্ণরূপে জাতিসংঘ সনদের পরিপন্তুী। তিনি ২৬ মার্চে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, দেশে শান্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যেই এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। সেনা বাহিনী শুধুমাত্র দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছে। দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) হাত থেকে তারা দেশকে রক্ষা করেছে মাত্র। বাণীতে তিনি তার ‘মহান্তু উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা করে বলেন, আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা।
‘মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা’ এ নীতিতে একমত থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা বিরোধীরা বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত ছিলো। বিভিন্ন দলে বিভক্ত এ স্বাধীনতা বিরোধীদের মধ্যে সমন্বয়কারীর কাজ করতেন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী।
এদিন হামিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় রাজনীতিক ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। টিক্কা খানকে তারা নিশ্চয়তা দিয়ে বলে যে, দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) উচ্ছেদ করতে তারা সেনা বাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধাদের) দমনে সহায়তা করা তাদের পবিত্র দায়িত্ব। এদের মধ্যে ছিল- ঘাতক গুরু জামাত নেতা অধ্যাপক গো’ আযম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের তথাকথিত পীর মোহসেন উদ্দিন, আইনজীবী এ.টি. সাদী প্রমুখ। হামিদুল হক চৌধুরী এক বিবৃতির মাধ্যমে এদিন জানান, পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ আর যা কিছু চাক না কেন কিছুতেই দেশের ঐক্য বিনষ্ট করতে চায় না। তিনি পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক গণহত্যা এবং বোমা বর্ষণের কথা অস্বীকার করে বলেন, এ ধরনের আজগুবি খবর প্রচার করে ভারত বাঙালীদের মধ্যে বিভেদ এবং বিশ্ব জনমতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিতে চায়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আগাশাহী জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানান। জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি জানান, উথান্ট পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনাকে সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মনে করে। ভারতীয় দস্যুদের সাহায্যের আশায় এখনও যারা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে; তাদের আশা কোনদিন সফল হবে না বলে জানায় পুর্ব-পাকিস্তান জমিয়তে ইত্তেহাদুল ওলামার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মফিজুল হক। এক বিবৃতিতে সে বলে যে, ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় আদর্শ বোকার স্বর্গে বাস করবে।
ধুরন্ধর ধর্মব্যবসায়ী জামাতের প্রধান মাওলানা মওদুদী বাংলাদেশ আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানদের সতর্ক করে দিয়ে বলে যে, যদি পূর্ব-পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হয় তবে মুসলমানরা তাদের স্বাধীনতা হারাবে। তারা হিন্দুদের নিম্নতম দাসে পরিণত হবে। আর তাই সে পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমানদের প্রতি আহবান জানায় তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ আন্দোলনকে ধ্বংস করে দেয়ার। সে সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকলাপকে সঠিক ও সময়োপযোগী বলে আখ্যায়িত করে। সেই সঙ্গে জানায়, কোন সেনা বাহিনীই বিদ্রোহীদের প্রশ্রয় দিতে পারে না।
(তথ্যসূত্র: দৈনিক পূর্বদেশ, ধর্মব্যবসায়ী ঘাতক জামাতীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম ৭, ৮, ১২ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী।)