-: Character of Rajaker and Jamat :-

ফিরে দেখা ইতিহাস
ঘাতক রাজাকার, আল-বাদর মওদুদী জামাতী, দেওবন্দী খারিজী, ওহাবী সালাফীদের দিনলিপি
৫ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী

পিডিপি প্রধান নুরুল আমিনের বেতার ভাষণ প্রচারিত হয় এদিন। ভাষণে সে ভারতীয় সংসদে প্রস্তাব গ্রহণের তীব্র সমালোচনা করে বলে যে, ভারত অনুপ্রবেশকারী পাঠিয়ে প্রকাশ্যে পূর্ব-পাকিস্তানে বিদ্রোহ উস্কে দিচ্ছে। তাছাড়া ভারতের ঘৃণ্য প্রচারণা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ সব কিছুই প্রমাণ করে অন্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের নূন্যতম সম্মানবোধও নেই। সে অযথা হস্তক্ষেপ সম্পর্কে ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলে যে, দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে চাই, আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর অন্যকোন দেশের হস্তক্ষেপ আমরা সহ্য করবো না। পাকিস্তানের মাটিতে যেকোন ধরনের বহিঃশত্রুর হস্তক্ষেপ সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে।
রেডিও ভাষণ দেয় পিডিপি সহ-সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদও। সে বলে যে, পাকিস্তান ধ্বংস করার ভারতীয় চক্রান্ত জনগণের কাছে ফাঁস হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত পাকিস্তান ধ্বংস করে আমাদেরকে পুনরায় তাদের দাসে পাণিত করতে চায়। সে জানায়, হাজার হাজার বাঙালি সৈন্য দেশ রক্ষায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। অথচ ভারত দেশপ্রেমিক সৈনিকেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালায় যে, বাঙালি সৈনিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে বিষোদগার তুলে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল খান এ সবুর। সে বলে যে- এটা এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, শেখ মুজিব এবং তার আওয়ামী লীগের ৬ দফা পূর্ব-পাকিস্তানের সরল জনগণকে প্রতারণা করার একটা আবরণ ছিলো মাত্র। এবং প্রকৃতপক্ষে তা ছিলো ফ্যাসিবাদী পন্থায় নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার সূক্ষ্ম চাল।
সবুর খান তার বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীর বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সময়োচিত ব্যবস্থা গ্রহণ বলে উল্লেখ করে। সে জানায়, সেনা বাহিনীর হস্তক্ষেপের ফলেই পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে। সেনা বাহিনী হস্তক্ষেপ না করলে দুষ্কৃতিকারীরা পাকিস্তান ধ্বংস করে দিতো।
এদিন বিবৃতি দেয় কাউন্সিল মুসলিম লীগের ১১ জন ধাড়ি নেতা। বিবৃতিতে ঘাতক নেতারা পাকিস্তানের অখণ্ডতা ও সংহতি রক্ষায় তাদের দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করে। তারা জানায়, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ভারত শত্রুতা করে আসছে। বর্তমানে মিথ্যা প্রচারণা ও পার্লামেন্টে প্রস্তাব প্রহণ করে পাকিস্তান ধ্বংসের একটি নয়া পদক্ষেপ নিয়েছে। বিবৃতিদাতারা হচ্ছে- দলের সহ-সভাপতি একিউএম শফিকুল ইসলাম, আবুল কাসেম, জেনারেল সেক্রেটারি খাজা খয়ের উদ্দিন, আতাউল হক খান, আতাউল হক, নূরুল মজুমদার, সেরাজুদ্দিন, এ মতিন প্রমুখ। নেতারা দেশদ্রোহী শত্রুদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেবার জন্যে দেশবাসীর প্রতি জোর আবেদন জানায়।
যেকোন মূল্যে পাকিস্তানের সংহতি বজায় রাখার উপর এদিন গুরুত্ব আরোপ করে মুসলিম লীগ প্রধান খান আব্দুল কাউয়ূম খান। সে জানায়, সংহতি বিনষ্ট হলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। নূন্যতম সুযোগ পেলেই দুষ্কৃতিকারীরা (মুক্তিযোদ্ধারা) পাকিস্তানের অখণ্ডতা বিপন্ন করে তুলবে। তাই সে সরকার এবং জনগণ উভয়কেই দুষ্কৃতিকারীদের প্রতি নজর রাখার আহবান জানায়।
সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের প্রচারিত এক প্রেসরিলিজে এদিন বলা হয়, পূর্ব-পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক জনগণ দুষ্কৃতিকারীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা কোথাও পাত্তা পাচ্ছে না। বর্তমানে তারা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে। নিরীহ জনসাধারণকে হয়রানি এবং লুটতরাজ তাদের একমাত্র কাজ। প্রেসরিলিজে বাহবা দিয়ে বলা হয়, এদের হাত থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে সেনা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। অভিযান চালাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে।
ধর্মব্যবসায়ী ঘাতক জামাতীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম এদিন দেশের পরিসি'তি বর্ণনা করে বলে যে, পূর্ব-পাকিস্তানের অবস্থা ক্রমশঃ শান্ত হয়ে আসছে। জনগণের মনে জেগেছে আস্থার ভাব। দেশে ৭টি দৈনিক পত্রিকা বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত হচ্ছে। দেশবাসী উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, তাদের পাশে বীর সেনা বাহিনী রয়েছে।
(তথ্যসূত্র: দৈনিক পূর্বদেশ, ধর্মব্যবসায়ী ঘাতক জামাতীদের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম ৫, ৬, ৭ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী।)