08 April 1971

ফিরে দেখা ইতিহাস
ঘাতক রাজাকার, আলবাদর জামাতী-খারেজীদের দিনলিপি
৮ এপ্রিল, ১৯৭১ ঈসায়ী

রাজাকার ইনফো: এ সময় মুসলিম লীগ নেতা কাজী আব্দুল কাদের পশ্চিম-পাকিস্তানে অবস্থান করছিল। কাজী কাদের এদিন করাচীতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলে যে, পূর্ব-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক অরাজকতার (মুক্তিযুদ্ধের) জন্যে শেখ মুজিব ও তার বেআইনি ঘোষিত আওয়ামী লীগ দায়ী। সে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রশংসা করে বলে যে, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) হাত থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচিয়েছে। পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতের হাতে তুলে দেবার জন্যে ভোট দেয়নি। কাজী কাদের সমাজবিরোধী দুষ্কৃতকারীদের খতম করে দেশে  অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পূর্ব-পাকিস্তানি মুসলমানদের সেনা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার আহবান জানায়।
পূর্ব-পাকিস্তান প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট শামসুল হুদা বলে যে, কোনো দেশপ্রেমিক মুসলমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সম্প্রসারণবাদী ভারতের নির্লজ্জ ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। ভারতীয় সরকারি রেডিও ‘আকাশবাণী’র প্রচারিত খবরকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কল্পিত বলে উল্লেখ করে সে দৃঢ় আস্থা নিয়ে বলে যে, কোনো প্রচারণাই দেশপ্রেমিক পাকিস্তানিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারবে না।
ন্যায্য অধিকারকে কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানি শাসকচক্র এদেশের মানুষের উপর লেলিয়ে দেয় পাক সেনা বাহিনীকে। অথচ জাতীয় পরিষদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার এটিএম আব্দুল মতিন দেশের পরিস্থিতির জন্যে দায়ী করেন ভারতকে। তিনি বলেন, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থনে পার্লামেন্টে প্রস্তাব গ্রহণ, অনুপ্রবেশকারী পাঠানো এবং মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ভারত গোলযোগ বাড়িয়ে চলেছে।
এসময় গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাক বাহিনী বিমান থেকে বোমা বর্ষণ করে। বেপরোয়া বোমা বর্ষণের ফলে টার্গেট এলাকাসমূহ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। এদিন ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স ডাইরেক্টরেটর এক প্রেস রিলিজে পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমা বর্ষণের কথা করে বলে, পূর্ব-পাকিস্তানের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করেছে মাত্র, বিমান বাহিনী কেবল দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীরা যেসব বাধা সৃষ্টি করেছে তা অপসারণ করেছে। কোনো শহর বা জনবহুল এলাকায় হামলা করেনি। 
পাক-চীন মৈত্রী সমিতির সভাপতি শেখ মমতাজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে এদিন সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বরাবরের মতো এবার পূর্ব-পাকিস্তানের ঘটনাবালীতে প্রকৃত বন্ধুর ন্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্যে গণচীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
ইন্দোনেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পূর্ব-পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর প্রতিবাদে সেখানকার পাকিস্তানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাত্রদের এ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, পাকিস্তানে যা ঘটেছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের মাথা ব্যাথার কোনো কারণ নেই। (তথ্যসূত্র: পূর্বদেশ, পাকিস্তান ৯, ১০ এপ্রিল ১৯৭১ ঈসায়ী।)